কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় অন্যের কাছে তুলে ধরার সহজ মাধ্যম হচ্ছে ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইট মূলত একটি নাম, পরিচয় বা ঠিকানা। ইন্টারনেটের পরিভাষায় যা ডোমেইন হিসেবে পরিচিত।
উদাহরণ: গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, জিমেইল ইত্যাদি।
ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য নাম খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই একটি ডোমেইন নাম নির্বাচন ও কেনার পূর্বে বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
এক নজরে দেখে নিই কী কী থাকছে পুরো আলোচনায়:
ডোমেইন নেম কী?
ডোমেইন নাম হচ্ছে একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইটের ইউনিক ঠিকানা। যা ব্যবহার করে ইন্টারনেটে সহজে ওই সাইটটি ভিজিট করা যায়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, আপনি যে বাসায় থাকেন তার একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা রয়েছে। যে ঠিকানা ব্যবহার করে সহজে আপনার কাছে পৌঁছানো সম্ভব।
ডোমেইন কেন প্রয়োজন ও এর গুরুত্ব?
কম্পিউটার সিস্টেম বাইনারি পদ্ধতিতে অর্থাৎ ০ এবং ১ এই দু’টি সংখ্যার মাধ্যমে কাজ করে। আমরা যে ডোমেইন ব্যবহার করি তা মূলত কিছু ০ এবং ১ সংখ্যার সমষ্টি, যা একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে সজ্জিত থাকে।
এই ফরম্যাটকে আইপি অ্যাড্রেস নামক একটি নিউমেরিক সিরিজ দ্বারা অ্যাসাইন করা হয়। উদাহরণ: 132.244.66.9
এ ধরনের আইপি অ্যাড্রেসকে মানুষের বোধগম্য ভাষায় লেখার জন্য ডোমেইন নামের উৎপত্তি।
ডোমেইন নেম সিস্টেম কীভাবে কাজ করে?
আমরা যখন ব্রাউজারে কোন নাম লিখে ইন্টার প্রেস করি, তখন প্রথমে এটি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক সার্ভারের কাছে একটি রিকোয়েস্ট পাঠায়।
[গ্লোবাল নেটওয়ার্ক সার্ভার ডোমেইন নেম সিস্টেম বা ডিএনএস তৈরি করে থাকে।]
এরপর এটি ওই ডোমেইনের ডিএনএস চেক করে এবং অনুরোধটি ফারোয়ার্ড করে।
[ডিএনএস মূলত হোস্টিং বা সিডিএন (কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক) সার্ভার।]
যেমন ব্লুহোস্ট হোস্টিং কোম্পানির ডিএনএস হচ্ছে:
ns1.bluehost.com
ns2.bluehost.com
আপনার অনুরোধকৃত ডেটাটি যদি সার্ভারে থাকে তাহলে সে এটি আপনার ব্রাউজারে পাঠিয়ে দেয়। আর এভাবেই আমরা যেকোন ওয়েবসাইটের কনটেন্ট দেখি।
[কনটেন্ট হচ্ছে কোন ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য (লেখা, ছবি, ভিডিও, অডিও ইত্যাদি)।]
ডোমেইন নাম নির্বাচন [৮টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস]
সঠিক গাইড লাইন মেনে ডোমেইন নাম নির্বাচন না করলে পরবর্তীতে সময় ও অর্থ অপচয়সহ আরও বড় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। চলুন জেনে নেই একটি ডোমেইন নাম নির্বাচন করার সময় কোন কোন বিষয় গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
নিশ বনাম অথোর ডোমেইন
নির্দিষ্ট কোন একটি বিষয়ের ওপর ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য নিশ ডোমেইন ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণ: ধরুন, আপনি যোগব্যায়াম সম্পর্কে ভালো জানেন। এখন এ সম্পর্কে ব্লগিং করার জন্য একটি নাম নির্বাচন করলেন “যোগব্যায়ামগুরু”। যেহেতু এটি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর ব্লগ, তাই এধরনের নামকে নিশ ডোমেইন বলে।
নিশ ডোমেইনকে ২ভাগে ভাগ করতে পারি।
১. এক্স্যাক্ট ম্যাচ ডোমেইন (EMD): এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কীওয়ার্ডটি মূল ডোমেইন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণ: ধরুন, আপনার মূল কীওয়ার্ড বা নিশ হচ্ছে How to make money online. এখন আপনি ডোমেইন কিনলেন howtomakemoneyonline.com. এখানে মূল কীওয়ার্ডটি দিয়ে ডোমেইন নাম নির্বাচন করা হয়েছে। তাই এটি এক্স্যাক্ট ম্যাচ ডোমেইন।
[আমরা যা কিছু লিখে ইন্টারনেটে সার্চ করি তা-ই কীওয়ার্ড।]
** গুগল বর্তমানে এ ধরনের ডোমেইনকে পেনালাইজড করে। তাই এ ধরনের ডোমেইন ব্যবহার না করার পরামর্শ রইলো।
২. পার্শিয়াল ম্যাচ ডোমেইন (PMD): এক্ষেত্রে মূল কীওয়ার্ডের একটি অংশ দিয়ে ডোমেইন নাম নির্বাচন করা হয়।
উদাহরণ: ধরুন, আপনার মূল কীওয়ার্ড হচ্ছে How to lose weight fast. এক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটের নাম হতে পারে weightlosetips.com
নিশ সাইটের ক্ষেত্রে এধরনের নাম সুবিধাজনক। ভিজিটর নাম দেখে সহজে বুঝতে পারে ব্লগটি কোন বিষয়ের ওপর লিখিত।
অপরদিকে, কোন একটি নামকে ব্র্যান্ডিং বা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অথোর ডোমেইন ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ হিসেবে আড়ং এর কথা বলা যেতে পারে।
আরও উদাহরণ হিসেবে আমার ব্লগকে বলা যেতে পারে। এটি মূলত আমার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
কোম্পানির নাম নির্বাচন
এখানে কোম্পানি বলতে আপনার প্রতিষ্ঠান, শপ, ব্লগ বা সেবা যেকোন কিছুই হতে পারে। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সকল আনুষ্ঠানিক কাজ (ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট নিবন্ধন ইত্যাদি) শেষ করার পূর্বেই ডোমেইন নাম নির্বাচন করে নেওয়া উচিত।
উদাহরণ: ধরুন, আপনি একটি কোম্পানি করলেন এবং নাম দিলেন বণিক বাড়ি। অফলাইন মার্কেটিং করে প্রতিষ্ঠানের বেশ পরিচিতি বাড়ালেন। বর্তমানে ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য একটি ওয়েবসাইট থাকা জরুরি। কিন্তু ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে দেখলেন bonikbari.com খালি নেই।
আপনি হয়তো নামের সাথে প্রিফিক্স, সাফিক্স, স্পেশাল ক্যারেক্টার বা অন্য এক্সটেনশন ব্যাবহার করতে পারবেন। কিন্তু এতে করে অনলাইনে আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু অনেকটাই কমে যাবে।
এছাড়া যারা আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম মনে রেখে সরাসরি ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন, তাদের একটি অংশ ভুল করে bonikbari.com লিখে ব্রাউজ করবেন। ফলে আপনি কিছু পটেনশিয়াল কাস্টমার হারাবেন।
[যে সকল কাস্টমারের কোন পণ্য কেনার বা সেবা গ্রহণের সম্ভাবনা বেশি থাকে, তারা হচ্ছেন পটেনশিয়াল কাস্টমার।]
ডোমেইন নামের দৈর্ঘ্য ও ব্র্যান্ড ভ্যালু
ডোমেইন সর্বোচ্চ ৬৭ অক্ষর পর্যন্ত হতে পারে। তবে একটি আদর্শ নাম ১৪ অক্ষরের মধ্যে নির্বাচন করা উচিত। এক্ষেত্রে নাম সহজ ও ছোট হওয়া বাঞ্চনীয়। সেই সাথে অবশ্যই অর্থবহ হতে হবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নাম ১১ অক্ষরের (স্পেসসহ) মধ্যে নির্বাচন করা উচিত। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্টকে ব্র্যান্ডিং ম্যাসেজ পাঠাতে সুবিধা হবে।
[ব্র্যান্ডিং ম্যাসেজ হচ্ছে কোন নাম্বারের পরিবর্তে নাম দিয়ে ম্যাসেজ করা। উদাহরণ হিসেবে মোবাইল অপারেটরদের প্রমোশনাল ম্যাসেজ উল্লেখ করা যায়। যেমন: GP Offer, Airtel Offer, BL Offer ইত্যাদি।]
উচ্চারণ, শব্দ চয়ন ও ক্যারেক্টার নির্বাচন
সহজে উচ্চারণ করা যায় এবং উচ্চারণ অনুযায়ী সহজে লেখা যায় এধরনের নাম নির্বাচন করা উচিত।
উদাহরণ: ধরুন, আপনার ব্র্যান্ডের নাম পদ্মপাতা। পদ্ম শব্দটি ইংরেজিতে Padma, Padmo, Podmo, Padda, Paddo, Poddo এভাবে লেখা যায়। যারা সরাসরি ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন, তারা বানান নিয়ে কনফিউজড হবেন। তাই এধরনের নাম বর্জন করাই উত্তম।
নাম এক শব্দের হলে সবচেয়ে ভালো হয়। যেমন: অ্যামাজন, রোলেক্স, গুগল, অ্যাপল। তবে তিন শব্দের বেশি হওয়া উচিত নয়।
ডোমেইনে আলফাবেটিক (a-z), নিউমেরিক (0-9) এবং স্পেশাল ক্যারেক্টার হিসেবে শুধু হাইফেন (-) ব্যবহার করা যায়। তবে শুরু এবং শেষে অবশ্যই আলফানিউমেরিক (a-z, 0-9) অক্ষর থাকবে।
** আদর্শ ডোমেইনে নিউমেরিক (0-9) ও স্পেশাল ক্যারেক্টার (-) ব্যাবহার না করাই উত্তম।
কপিরাইট ও ট্রেডমার্ক
কোন নামকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে সেটি কপিরাইট বা ট্রেডমার্কের আওতাভুক্ত কিনা তা জেনে নেওয়া উচিত। অন্যথায় পরবর্তীতে আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
কপিরাইট ও ট্রেডমার্কের ক্ষেত্রে ডোমেইন কোন সমস্যা না। মূল সমস্যা হচ্ছে নাম। আপনি কপিরাইট বা ট্রেডমার্ক করা কোন নাম আইনগতভাবে ব্যবহার করার অধিকার রাখেন না।
আপনি যে দেশে ব্যবসা পরিচালনা করবেন নামটি যদি সেই দেশের আইন দ্বারা কপিরাইট বা ট্রেডমার্ক করা থাকে তাহলে ব্যবহার করতে পারবেন না।
এছাড়া আপনার নামটি International Copyright Law দ্বারা সংরক্ষিত কিনা তা জেনে নেওয়া ভালো। প্রায় সকল দেশ এই আইন সংরক্ষণ করে থাকে। এই আইনের ফলে গুগল, ফেসবুক, অ্যাপল, স্যামসাং ইত্যাদি ব্র্যান্ডগুলো আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষিত।
কোম্পানির নাম ও সেবা
শুনতে একই মনে হয় এমন কোন নাম নিয়ে একই রকম ব্যবসা শুরু করা উচিত নয়।
উদাহরণ: আজকেরডিল বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস। এখন আপনি আইজকেরডিল নামে একটি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করলেন। ফলে আপনি আজকেরডিল কোম্পানির সাথে আইনী ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে পারেন।
এছাড়া এ ধরনের নাম আপনার নতুন প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের ব্র্যান্ডের প্রতি অডিয়েন্স সহজে আস্থা রাখতে পারেন না।
ডোমেইন এক্সটেনশন নির্বাচন
সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগলের মতে, ডোমেইন এক্সটেনশন সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিংয়ে কোন প্রভাব ফেলে না। তাই আপনার সেবার ধরন অনুযায়ী যে কোন এক্সটেনশন ব্যবহার করতে পারেন।
জনপ্রিয় এক্সটেনশনগুলো এক এক ধরনের কাজ বা সেবা প্রকাশ করে থাকে। যেমন:
ICANN-এর বরাদ্ধের ওপর ভিত্তি করে এক্সটেনশনগুলো ২ প্রকার।
[ICANN (The Internet Corporation for Assigned Names and Numbers) হচ্ছে আইপি ও ডোমেইন নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরা টপলেবেল ও কান্ট্রি কোড ডোমেইন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।]
১. gTLD: Generic Top Level Domain (gTLD) হচ্ছে গ্লোবালি জনপ্রিয় ও সর্বাধিক ব্যবহৃত ডোমেইন এক্সটেনশন। ওয়েবসাইটকে ওয়াইডলি ব্যবহারের জন্য এধরনের এক্সটেনশন ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ: .com, .net, .org, .info ইত্যাদি।
২. ccTLD: Country Code Top Level Domain (ccTLD) মূলত নির্দিষ্ট দেশ বা ভৌগলিক অবস্থানের জন্য ICANN কর্তৃক বরাদ্ধকৃত ডোমেইন এক্সটেনশন।
উদাহরণ: .cc, .tv, .in, .pk, .us, .uk ইত্যাদি। বাংলাদেশের জন্য বরাদ্ধকৃত ccTLD হচ্ছে .bd
এছাড়া গ্লোবালি বহুল জনপ্রিয়তার কারণে কিছু কিছু ccTLD-কে gccTLD বা Generic Country Code Top Level Domain বলা হয়।
উদাহরণ: .cc, .tv, .io ইত্যাদি।
** বহুল ব্যবহৃত ডোমেইন এক্সটেনশন হচ্ছে .com. তাই এক্সটেনশন হিসেবে .com ব্যবহার করাই উত্তম।
NACKET নাকি FQDN?
শুধু এক্সটেনশন যুক্ত নামকে ন্যাকেট ডোমেইন বলে। উদাহরণ: bonikbari.com.
ন্যাকেট ডোমেইনের পূর্বে www. ব্যবহার করা হলে তাকে Fully Qualified Domain Name (FQDN) বলে। উদাহরণ: www.bonikbari.com
গুগলের মতে, Nacket বা FQDN সার্চ র্যাংকিংয়ে কোন প্রভাব ফেলে না। তাই আপনি যে কোনটি ব্যবহার করতে পারেন।
তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, আপনার ডোমেইন যেন Canonical URL করা থাকে।
[Canonical URL হচ্ছে Domain Redirection.]
অর্থাৎ, FQDN-কে Nacket Domain-এ, অথবা Nacket Domain-কে FQDN-এ রিডাইরেক্ট করে দেওয়া।
উদাহরণ: bloggerzia.com ব্রাউজ করলে তা সরাসরি www.bloggerzia.com এ নিয়ে আসে। এতে করে ডাইরেক্ট ভিজিটর হারানোর সম্ভাবনা থাকে না।
ডোমেইন কেনায় সতর্কতা [৪টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়]
একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট আপনার ব্যক্তিগত কিংবা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় অনলাইনে তুলে ধরে। তাই তাড়াহুড়ো না করে ডোমেইন কেনার সময় বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
রেগুলার বনাম প্রিমিয়াম ডোমেইন
রেজিস্ট্রার ও এক্সটেনশন ভেদে ডোমেইনের মূল্য ভিন্ন হতে পারে। একটি ডট কম ডোমেইনের রেগুলার মূল্য ৮ থেকে ১৫ ডলার হতে পারে।
আবার কিছু কিছু নাম কয়েকগুণ বেশি দামে অফার করা হয়ে থাকে। এগুলো মূলত প্রিমিয়াম লিস্টেড ডোমেইন।
ডোমেইন প্রিমিয়াম লিস্টেড ২ ভাবে হতে পারে।
১. কেউ একটি ডোমেইন কিনে তা পুনরায় বিক্রির জন্য পার্ক করে রাখলে।
উদাহরণ: কেউ insurance.com কিনে পুনরায় বিক্রির জন্য ১০০,০০০ ডলার মূল্য নির্ধারণ করে পার্ক করে রাখলো। এখন এই ডোমেইনের মূল্য দেখাবে ১০০,০০০ ডলার।
২. ওই এক্সটেনশনের মালিকানা যে দেশ বা প্রতিষ্ঠানের হাতে তারা প্রিমিয়াম মূল্য নির্ধারণ করে দিলে।
উদাহরণ: .com.bd এই এক্সটেনশনের মালিক বাংলাদেশ। অর্থাৎ বিটিসিএল। এক্ষেত্রে তারা কিছু চাহিদা সম্পন্ন নামকে প্রিমিয়াম হিসেবে লিস্টেড করে রাখতে পারে।
প্রিমিয়াম ডোমেইন বাজেটের মধ্যে হলে অবশ্যই কেনা উচিত। কারণ, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে নাম অনেক বড় একটা ফ্যাক্ট। যেমন: insurance24.com এর চেয়ে insurance.com নামটি অনেক বেশি প্রোফেশনাল ও বিশ্বস্ত মনে হয়।
ডোমেইনের বয়স রিসার্চ
কোন ডোমেইন রিনিউ না করা হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে তা পুনরায় বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ ধরনের ডোমেইন ব্র্যান্ড ও সার্চ র্যাংকিয়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এটি জানার সবচেয়ে ভালো ২টি পদ্ধতি হচ্ছে –
১. archive.org সাইটে ডোমেইনটি লিখে সার্চ করুন।

এটি হচ্ছে একটি আর্কাইভ সাইট যা প্রায় সকল নিবন্ধিত ডোমেইনের তথ্য জমা রাখে। এদের আর্কাইভে কোন তথ্য থাকলে তা ক্যালেন্ডারে মার্ক করে দেখাবে।

২. site:bloggerzia.com লিখে গুগলে সার্চ করুন। (bloggerzia.com-এর পরিবর্তে আপনার ডোমেইন লিখুন।)
পুরনো ডোমেইনের ক্ষেত্রে গুগলের ডেটাবেসে এখনো কোন তথ্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
পুরাতন ডোমেইন কেনায় সতর্কতা
পুরনো ডোমেইন কেনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ৩টি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
১. কপিরাইট ক্লেইম: Google Transparency Report সাইটটি ব্যবহার করে দেখুন গুগলে ডোমেইনটির কোন কন্টেন্টে কপিরাইট ক্লেইম আছে কিনা।

২. ব্লাক লিস্টেড: ডোমেইনটি স্প্যামিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হলে সার্চ ইঞ্জিন (গুগল, বিং ইত্যাদি), ইমেইল সার্ভিস প্রোভাইডার (জিমেইল, হটমেইল ইত্যাদি), অ্যাড এজেন্সি (অ্যাডসেন্স ইত্যাদি) তা ব্লাক লিস্টেড করে রাখতে পারে।
গুগলে সার্চ করলে ব্লাক লিস্টেড ডোমেইন চেক করার অনেক কার্যকরী পদ্ধতি পেয়ে যাবেন।
৩. এস.ই.ও. ফ্যাক্ট: পুরনো ডোমেইনে অনেক ব্রোকেন লিংক ও 404 ইরোর থাকতে পারে। যা পরবর্তীতে সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিয়ে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
site:bloggerzia.com লিখে গুগলে সার্চ করে দেখতে পারেন কী পরিমাণ লিংক রয়েছে। (bloggerzia.com-এর পরিবর্তে আপনার ডোমেইন লিখুন।)
রেজিস্ট্রার নাকি রিসেলার?
নাম নির্বাচন করা হয়ে গেলে যতদ্রুত সম্ভব তা কিনে নেওয়া উচিত।
ICANN সরাসরি যে সকল প্রতিষ্ঠানকে ডোমেইন বিক্রি করার অনুমতি দেয় তারা হচ্ছেন রেজিস্ট্রার।
রেজিস্ট্রার কোম্পানি যখন কোন থার্ড-পার্টি কোম্পানিকে ডোমেইন বিক্রির অনুমতি দেয় তাদের বলা হয় রিসেলার।
ডোমেইন রেজিস্ট্রারগণ যেহেতু ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ব্যবসা পরিচালনা করে তাই এদের দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে।
অন্যদিকে রিসেলারগণ ব্যবসা নিম্নমুখী হলে দেউলিয়া হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
গ্লোবাল পেমেন্ট সুবিধা (ডুয়েল কারেন্সি বা ইন্টারন্যাশনাল কার্ড) থাকলে সরাসরি রেজিস্ট্রার থেকে ডোমেইন কেনা ভালো। অন্যথায়, ভালো কোন লোকাল রিসেলারের কাছ থেকে কিনতে পারেন।
রেজিস্ট্রার বা রিসেলার নির্বাচন করার সঠিক পদ্ধতি
একটি আদর্শ রেজিস্ট্রার বা রিসেলার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে পরবর্তীতে ডোমেইন হারানোসহ অন্যান্য সমস্যার সম্মুখিন হতে পারেন।
ডোমেইনের খরচ
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান প্রথম বছরের জন্য রেজিস্ট্রেশন ও ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে তাদের রেগুলার প্রাইস জানতে হবে।
যেমন: IONOS by 1&1 প্রথম বছরের জন্য ১ ডলার ও পরবর্তী বছরের জন্য ১৫ ডলার চার্জ করে থাকে।
প্রাইভেসি প্রোটেকশন
ডোমেইন কেনার সময় ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক কিছু তথ্য (নাম, ইমেইল, ফোন নাম্বার ও ঠিকানা) দিতে হয়। এই তথ্যগুলো whois রেকর্ডে জমা থাকে।
[Whois হচ্ছে একটি বহুল ব্যবহৃত ইন্টারনেট রেকর্ড তালিকা, যা কোন ডোমেইনের মালিক কে এবং কীভাবে তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে তা রেকর্ড করে রাখে।]
এই তথ্যগুলো ইন্টারনেটে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। যা প্রাইভেসি প্রোটেকশন দ্বারা লুকানো যায়।
[Privacy protection এর অন্য নাম হচ্ছে Whois guard বা Whois privacy.]
কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে ডোমেইনে প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য ব্যবহার করা ভালো। এতে ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা বাড়ে।
কিন্তু ব্যক্তিগত ডোমেইনের ক্ষেত্রে এই তথ্য লুকিয়ে রাখা শ্রেয়। অন্যথায় আপনার তথ্য স্প্যামিংয়ে ব্যবহৃত হতে পারে।
সকল রেজিস্ট্রার প্রাইভেসি প্রোটেকশন সুবিধা দেয়। তবে কিছু কিছু রেজিস্ট্রার এর জন্য বাড়তি চার্জ নিয়ে থাকে। যেমন: Godaddy
রিসেলারের কাছ থেকে ডোমেইন কেনার পূর্বে জেনে নিবেন প্রাইভেসি প্রোটেকশন সার্ভিস আছে কিনা। আর থাকলে এর জন্য বাড়তি চার্জ দিতে হবে কিনা।

ইমেইল ফরোয়ার্ডিং
ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ব্র্যান্ডাবল ইমেইল ব্যবহার করা ভালো।
[নিজ ডোমেইন নামের ইমেইল হচ্ছে ব্র্যান্ডাবল ইমেইল। যেমন: [email protected]]
Brandable email ব্যবহার করার সহজ ২টি উপায় রয়েছে।
১. নিজ হোস্টিং সার্ভারে ওয়েবমেইল সেটআপ করা: এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ইমেইল সার্ভিস। এক্ষেত্রে আপনি ইনকামিং ও আউটগোয়িং দু’টি সেবাই ব্যবহার করতে পারবেন।
২. ইমেইল ফরোয়ার্ডিং সার্ভিস: এক্ষেত্রে হোস্টিং স্পেস ব্যবহার করা হয় না। শুধু ইমেইল অ্যাড্রেস তৈরি করে জিমেইল বা অন্য কোন ইমেইল অ্যাকাউন্টে ফরোয়ার্ড করে রাখা হয়।
এক্ষেত্রে শুধু ইনকামিং সেবা থাকে। ওয়েবমেইল না থাকায় এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে সরাসরি কোন ইমেইল পাঠানো যায় না।
তবে ইমেইল মার্কেটিং প্লাটফর্ম (গেটরেস্পন্স, মেইলারলাইট, মুসেন্ড ইত্যাদি) ব্যবহার করে ইনডিভিজুয়াল বা বাল্ক ইমেইল পাঠানো যায়।
ইমেইল মার্কেটিংসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিজ ডোমেইনের ইমেইল অ্যাড্রেস ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ইমেইল ফরোয়ার্ডিং সার্ভিসটি বেশ কার্যকর।

এছাড়া Gsuite বা এধরনের পেইড সার্ভিস ব্যবহার করেও ব্র্যান্ডাবল ইমেইল তৈরি করা যায়।
কন্ট্রোল প্যানেল
** একটি ডোমেইনের যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ এর কন্ট্রোল প্যানেলের মাধ্যমে হয়। তাই এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে থাকা আবশ্যক।
স্বনামধন্য সকল রেজিস্ট্রার ডোমেইনের ফুল কন্ট্রোল প্যানেল দিয়ে থাকে। তবে লোকাল রিসেলারের ক্ষেত্রে কিছু তথ্য জেনে নিতে হবে।

[রেজিস্ট্রার বা রিসেলার ভেদে কন্ট্রোল প্যানেল ভিন্ন হতে পারে। ফ্রড রিসেলার ডোমেইন বিক্রির জন্য মিথ্যা তথ্য দিতে পারে।]
ফোরাম সার্চ
কোন রেজিস্ট্রার বা রিসেলার সম্পর্কে জানার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হচ্ছে বিভিন্ন অনলাইন ফোরামে সার্চ করা। তাই কোন রেজিস্ট্রার বা রিসেলার নির্বাচনের পূর্বে গুগলে সার্চ করে এদের সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন।
ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি [স্টেপ-বাই-স্টেপ]
ডোমেইন রেজিস্ট্রেশনের জন্য নেমসিলো, নেমচিপ, ডোমেইন-সহ আরও অনেক জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত রেজিস্ট্রার রয়েছে। এছাড়া ব্লুহোস্ট, হোস্টগেটর, হোস্টিংগার-সহ অনেক রেপুটেড হোস্টিং কোম্পানিও ডোমেইন নিবন্ধন সেবা দিয়ে থাকে।
(ICANN কর্তৃক অনুমোদিত সকল রেজিস্ট্রারদের তালিকা দেখুন।)
এদের মধ্যে বিশ্বব্যাপী স্বল্পমূল্যে ডোমেইন সেবা দেওয়ার জন্য নেমসিলো বেশ জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত। বর্তমানে এদের ২ মিলিয়নের বেশি অ্যাকটিভ ডোমেইন রয়েছে।
Namesilo LLC একটি অ্যামেরিকান ডোমেইন ও হোস্টিং কোম্পানি। মাইকেল গোল্ডফারব এটি ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। এর হেডকোয়ার্টার অ্যারিজোনাতে অবস্থিত।
ডোমেইনের রেগুলার প্রাইস সবচেয়ে কম হওয়ায় এবং ডোমেইনের সাথে প্রয়োজনীয় সকল সেবা ফ্রি দেওয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে নেমসিলো পছন্দ করি। এই অংশে নেমসিলোতে একটি ডোমেইন কেনার পুরো প্রক্রিয়া দেখবো।
স্টেপ -১: ডোমেইন নির্বাচন করুন

স্টেপ -২: কনফিগারেশন অপশন
BLOGGERZIA

স্টেপ -৩: ইউজার অ্যাকাউন্ট
প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ইউজার অ্যাকাউন্ট খুলুন। ইতোমধ্যে অ্যাকাউন্ট থাকলে লগ ইন করুন।

স্টেপ -৪: পেমেন্ট
আপনার সুবিধাজনক পদ্ধতিতে পেমেন্ট করুন। সবকিছু ঠিক থাকলে ইমেইলে ডোমেইন কেনার সকল তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে।

[কিছু পেমেন্ট মেথডের ওপর ট্রানজেকশনাল চার্জ যোগ হতে পারে। স্ক্রিনশটে দেখানো ইন্টারফেসে ভিন্নতা থাকতে পারে। (তারা নতুন ইন্টারফেস নিয়ে কাজ করছে।)]
ডোমেইন নিয়ে কমন কিছু প্রশ্নোত্তর
এক নজরে পোস্ট সামারি
ফ্রি মাস্টারকার্ড
ফ্রি ইন্টারন্যাশনাল মাস্টারকার্ড ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জন্য আবেদন করুন।